হেফাজতে ইসলামের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালনকালে বিক্ষুব্ধ হরতালকারীরা সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ অফিস, আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয় ও বাড়িঘরে ব্যাপক হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়।
এর ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় অরাজকতা সৃষ্টি হয়। এদিকে রোববার ২ জন নিহতের পর মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ জনে। শহরজুড়ে চলছে থমথমে অবস্থা।
সশস্ত্র কর্মীরা বেলা ১১টার পর থেকে শহরের হালদারপাড়ার জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, জেলা পরিষদ কার্যালয়, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহীর গাড়িসহ ৩টি মোটরসাইকেল, সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তন, জেলা ক্রীড়া সংস্থা, পৌরসভা ভবন, পৌরসভা গ্যারেজের ৩টি গাড়ি, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের কার্যালয়, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা গণগ্রন্থাগার, সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন, সদর উপজেলা ভূমি অফিস, আশুগঞ্জ টোলপ্লাজার বুথ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারের বাসভবন ও তার শ্বশুরবাড়ি, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদত হোসেন শোভনের বাড়িতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।
শহরের শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত উন্নয়ন মেলার ৩২টি স্টলে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব, ব্যাংক অব এশিয়া, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্স, শহরের আনন্দময়ী কালীবাড়ির মন্দিরের মূর্তি, বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়ার নিজস্ব অফিস, বিজয়নগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাসিমা মুকাই আলীর শহরের হালদারপাড়ার বাসভবন, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র, দলিল লেখক সমিতি, ঠিকাদার খাইরুল আলমের বাসভবনে ব্যাপক ভাংচুর চালানো হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবে হামলার সময় প্রেস ক্লাবের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামি গুরুতর আহত হন। এদিকে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত শহরের পৈরতলা, জেলা পুলিশ লাইন, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক বিশ্বরোড এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
বেলা ১১টার দিকে শহরের পীরবাড়িতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ লাইনে বিক্ষোভকারীরা হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘণ্টাব্যাপী পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে।
হামলা চলাকালীন শহরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যকে দেখতে পাওয়া যায়নি। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে থানা মসজিদ থেকে পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করে থানায় হামলা না চালানোর জন্য মাদ্রাসার ছাত্রদের অনুরোধ করা হয়।
অগ্নিসংযোগের বিষয়ে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল আলম বলেছেন, আমার অফিসে এসে হরতালকারীরা ভাংচুর চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলীর গাড়িতে ভাংচুর করে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
এদিকে নিরাপত্তার কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট ও নোয়াখালীর পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সকাল ৯টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চট্টগ্রামগামী সোনারবাংলা এক্সপ্রেসে ভাংচুর চালানো হয়। খুলে ফেলা হয় রেললাইনের নাট-বল্টু। লাইনের ওপর কংক্রিটের স্ল্যাবও ফেলে রাখে হরতালকারীরা। আশুগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাঝখানে ১৮ নম্বর রেল সেতুতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী সাংবাদিকদের জানান, নিরাপত্তার কারণে সকাল ৯টার পর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে।